আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন?
আশা করি সবাই ভালো আছে।
ইসলামিক গল্প।
পর্ব ১০
কক্সবাজারের একটা চমৎকার লোকেশনে কাবেরির সিনেমার শুটিং চলছে। লোকজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে থেকে শুটিং দেখছে। আজকের শুটিংয়ে কাবেরির সঙ্গে তার মা এসেছেন। গতকালের লাইভ অনুষ্ঠানের পর থেকে তিনি এক রকম আতঙ্কেই আছেন। কাবেরি শুটিংয়ের জন্য প্রস্তুত। পরের অংশের শর্ট দিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই এক ফটো সাংবাদিক এগিয়ে এলেন, ‘ম্যাডাম, আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই।” কাবেরি ব্যস্তসমস্ত হয়ে বলল, 'একটু পরে নিলে হয় না ভাইয়া? আমার তো এখন শট দিতে হবে। ‘আমার হাতে সময় কম। শর্টটা পড়ে নিতে বলেন আপু! আগে ইন্টারভিউ পরে শর্ট।' কাবেরি বসে পড়ল। সাংবাদিকদের অসন্তুষ্ট করা যায় না। এতে বিপদ আছে। পত্রিকায় উল্টাপাল্টা লিখে ক্যারিয়ারের বারোটা বাজাতে পারে। ‘বলুন ভাইয়া, কী জানতে চান।' সাংবাদিকটি মোবাইল ফোনের রেকর্ডিং বাটন টিপল। খুঁটিনাটি অনেক বিষয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে কাবেরির কাছে সাংবাদিকটি জানতে চাইল, ‘গতকালের লাইভ অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা নিয়ে কি কিছু বলবেন? এই ঘটনায় আপনার অনুভূতি কী? ‘কোনো অনুভূতি নেই। বলল কাবেরি। ‘আপনার কি কিছুই বলার নেই?
'না, নেই।' “কিছু তো অন্তত বলুন! ‘আমি এটাকে নিছক কোনো এক পাগলের পাগলামি হিসেবেই ধরে নিচ্ছি। ক্যারিয়ারে এমন অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। আমি পাত্তা দিচ্ছি না।' ‘আপনার কাছে কি এই ঘটনাকে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ বলে মনে হচ্ছে না?? কাবেরি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই পরিচালক সাহেব তাড়া দিলেন, “কী হচ্ছে কাবেরি! শুটিং রেখে ইন্টারভিউ দিচ্ছ যে? ওদিকে রোদের তেজ বেড়ে যাচ্ছে। রোদ বেড়ে গেলে আজকে আর শুটিংই করা যাবে না। চলো চলো!” কাবেরি উঠে দাঁড়াল। পিছু পিছু ছুটে চলল মেকআপম্যান, আম্ব্রেলাম্যান এবং কাবেরির পার্সোনাল সেক্রেটারি। মৃন্ময়ীদের বাসার গেটে পা দিয়ে জারার বুক ধড়ফড় করতে লাগল। আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। সকাল থেকেই চুলায় গ্যাস ছিল না। দুপুরের রান্না চড়াতে তাই সময় লেগে গেছে। বাবা এবং সিনথিয়ার খাওয়া শেষ হলে জারা সামান্যই মুখে দিতে পেরেছিল। এরপর দ্রুত হাতে এঁটো বাসনপত্র ধুয়ে গুছিয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার করতে হয়েছে। বাথরুমে বেশ কিছু কাপড় ভেজানো ছিল। ধোয়ার সময় পাওয়া যায়নি। দেরি হয়ে গেলে সিলভি খানমের হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এত দেরি হলো কেন? সময়জ্ঞান নেই? এত কাজ থাকলে টিউশনি করার কী দরকার? বাসায় আরাম করলেই তো পারো! মৃন্ময়ীর রেজাল্ট খারাপ হলে এর দায় নেবে কে? জারা দ্রুত পা চালাল। মৃণ্ময়ীদের বিরাট বাড়ি। গেট দিয়ে ঢুকে বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত পৌঁছতে বিশাল একটা বাগান পেরুতে হয়। এরপর লিফটে করে উঠতে হয় ছয় তলা পর্যন্ত। এই পুরোটা পথ ধুকপুকানির ভেতর দিয়েই যেতে হবে। জারার এমনই কপাল, বেছে বেছে আজই লিফট বন্ধ। মিস্ত্রীরা লিফট মেরামত করছে। বাড়ির কেয়ারটেকার চাচা জারাকে ডেকে বলল, 'খালামনি! কই যাইবেন, ছয় তলায়?? কেয়ারটেকার চাচার এই ডাকটা জারার অসাধারণ লাগে! লোকটাকে বড় আপন মনে হয়। খুবই ভালো একজন মানুষ। এ বাড়িতে পড়াতে আসার পর থেকেই চাচাকে দেখছে। হাসিখুশি ছোটোখাটো এই মানুষটা সারাক্ষণ পান চিবুতে থাকেন। মুখে ফিনফিনে সাদা দাড়ি। উজ্জ্বল চেহারার সঙ্গে হাসি, সাদা দাড়ি এবং পান চিবুনো অসাধারণভাবে মানিয়ে গেছে। জারা বলল, ‘জি চাচা!’ 'তাইলে খালামনি, একটু কষ্ট করে সিঁড়ি দিয়া উইঠ্যা পড়েন। লিফট নষ্ট। ঠিক হইতে সময় লাগব।” জারা সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। লিফট দিয়ে উঠতে উঠতে অভ্যাস হয়ে গেয়েছিল। এখন সিঁড়ি ভাংতে ক্লান্তি লাগছে।
আগামী পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল দিব।
এতক্ষণ গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমাদের সাথেই থাকুন।
সবাই ভালো থাকুক সুস্থ থাকুন।
আল্লাহ হাফেয।
আসসালামু আলাইকুম।
Comments